বাঘায় সেই পাখির বাসা ভাড়ার অর্থের চেক পেলেন বাগান মালিকরা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২১ ০১:০০; আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:৩১

আনুষ্ঠানিক ক্ষতিপূরণ প্রদান।

লালন উদ্দীন, বাঘা, রাজশাহী 


রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে সেই পাখির বাসা ভাড়ার অর্থের চেক হাতে পেয়েছেন বাগান মালিকরা। বাগান মালিক ও ইজারাদারদের ক্ষতিপূরণের টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানার কার্যালয়ে মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় তাদের হাতে আনুষ্টানিকভাবে এই অর্থের চেক তুলে দেন।

জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের বন-২ শাখার উপ-সচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী ২০২০ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই মোতাবেক ৩৮টি আম গাছের ৫ জন মালিককে বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত হতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের ডেকে বার্ষিক ৩ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা প্রদান করেন।

টাকা প্রদানের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আম বাগানের শামুখখোল পাখি বিগত ৩ বছর যাবত আসছে। প্রাকৃতিক কারণে বা যে কোন সময় পাখি উক্ত স্থান ত্যাগ করে অন্য কোন নতুন স্থানে চলে যেতে পারে। সেহেতু আগামী কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে এতদবিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে যে বছর পাখি বসবেনা, সে বছর কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। যে বাগান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন মুঞ্জুরুল হক মুকুল সানার উদ্দীন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম মুকুট, ফারুক হোসেন।

বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম মুকুট বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় থেকে টাকা প্রদানের অনুমতির চিঠির প্রেক্ষিতে টাকা হাতে পেয়েছি।

মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ৩ বছর ধরে পাখিরা বাগানে আসছে। এর আগের দুই বছরের টাকা মালিকরা যদি পায়, তাহলে ক্ষতিটা অনেক পুষিয়ে আসবে। অপরদিকে গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে জন্য নিয়মিত পরিচর্যা দাবি জানান। পাখি সুরক্ষায় এটি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। বাগান মালিকদের জন্য সরকারি এমন একটি প্রকল্পের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আরেক বাগান মালিক সাহাদত হোসেন বলেন, এই পাখি প্রজননে অতীত কোন ইতিহাস না থাকলেও খোর্দ্দ বাউসা গ্রামটি খাল-বিলের পাশে হওয়ায় প্রজনন সম্ভব হচ্ছিল কিন্তু বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি আমগাছের ডাল কেটে পাখির বাসা ভেঙ্গে দেন আম ব্যবসায়ী। ফলে হুমকির মুখে পড়ে হাজারো শামুকখোল পাখি। স্থানীয় পাখি প্রেমি কিছু মানুষ বাঁধা দিলে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন আম বাগান মালিকরা। এই খবর বিভিন্ন গনমাধ্যমে ছাপা হলে পাখী সুরক্ষায় পাশে দাঁড়ায় র‌্যাব।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায় পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আদালতে রিটপিটিন করেন। পাখির বাসা ভাঙা যাবে না বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি কি পরিমান ক্ষতি হবে তা জানতে চেয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারপরে আম বাগানের ক্ষতির বিষয়ে জরিপ করে ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করে প্রতিবেদন দেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ৩৮টি আম গাছে পাখী বাসা বেঁধে আছে। সেই আম গাছের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করে ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেই মোতাবেক বাগান মালিকরা টাকার টাকা হাতে পেয়েছে।

রাজশাহী বন সংরক্ষন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, মন্ত্রনালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধান বন সংরক্ষণ (সিসিএফ) কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নির্দেশনায় চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, গত চার বছর থেকে স্বেছায় পাখি পাহারা দিয়ে আগলে রেখেছেন খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, বিছাদ আলী, নাসিম আঞ্জুম, সাইফুল ইসলামসহ গ্রামবাসী। সেই মোতাবেক আম বাগানের ক্ষতি বাবদ টাকা সরকারিভাবে দেয়া হয়েছে।

আনুষ্টানিকভাবে বাগান মালিকদের চেক বিতরণ করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু, রাজশাহী বন সংরক্ষন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, বন্যা প্রাণী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, বাঘা উপজেলা বৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান, ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম, চারঘাট বন কর্মকর্তা এবিএম আবদুল্লাহ, বাঘা বন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। বাগান মালিকদের পক্ষে অতিথির কাথে থেকে চেক গ্রহন করেন শফিকুল ইসলাম মুকুট

 

  • এসএইচ


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top