কাসেমী মাদ্রাসার মোহতামিম ছলিমুদ্দিন কাসেমী আর নেই

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১ ০২:৪৬; আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ০৭:৩৭

মোহতামিম ছলিমুদ্দিন কাসেমী

রাজশাহীর ‘আল জামিয়া আল ইসলামিয়া আল্লামা মুহম্মদ মিয়া (ইসলামিয়া মাদ্রাসা) মাদ্রাসার মুহতামিম আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সোমবার (১৪ জুন) সোমবার বিকাল ০৬:৪৫ টায় মাদ্রাসার পাশের বাসায় ইন্তিকাল করেন তিনি।

মৃত্যুকালে ২ পুত্র ২ কন্যা সন্তান, নাতী নাতনীসহ আত্মীয়-স্বজন, অসংখ্যা সুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

একনজরে তাঁর জীবনী

আল্লামা ছলিম উদ্দিন কাসেমী

(১৯২১-২০২১ খ্রি.): কর্ম ও জীবন

আল্লামা মোঃ ছলিম উদ্দিন কাসেমী (রহ.)- একজন ইসলাম ধর্মের সাধন ও প্রচারক, পরিশ্রমী, দায়িত্ব সচেতন, আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। সহজ-সরল, আমানতদার, পাহাড়সম ধৈর্যের অধিকারী, সরলমনা এই ক্ষণজন্মা মানুষটি সবাইকে বেঁধে রেখেছিলেন আন্তরিকতা ও ভালোবাসার এক অদৃশ্য সুতোয়। তাঁর ১৯২১ থেকে ২০২১ খ্রি. পর্যন্ত মোট ১০১ বছরের জীবনকাল আদর্শ হয়ে থাকবে সকলের মাঝে।

জন্ম: মোঃ ছলিম উদ্দিন কাসেমী- তৎকালীন সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত আলোকদিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মোঃ আঃ কাদের ও মাতা- আমিনা খাতুন।

লেখাপড়া: তাঁর পড়াশুনা গ্রামের স্কুলে আরম্ভ হয়। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ৭ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করেন। এরপর তিনি কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তৎকালীন সিরাজগঞ্জ জেলাধীন শাহপুর মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করেন। সেখানে হেদায়াতুন নাহু জামাত (শ্রেণী) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৫১ সালে খুব অল্প বয়সে পাড়ি জমান ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার অন্তর্গত দেওবন্দ নামক গ্রামে। ভর্তি হন ইলহামী মাদ্রাসা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ মাদ্রাসায়। সেখানে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত একাধারে ৭ বছর পড়াশুনা করেন। কৃতিত্বের সাথে দাওরা হাদিস (মাস্টার্স) পাশ করেন। জগৎবিখ্যাত আলিমেদ্বীন আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর নিকট থেকে দাওরা হাদিসের উল্লেখযোগ্য বুখারী নামক কিতাবটির হাদিসের সনদ (ধারাবাহিকতা) গ্রহণ ও তাঁর শিষ্যত্ব অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১ বৎসর ব্যাপী উক্ত প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করেন এবং ইলমে তাসাউফ (আধ্যাত্মিক জ্ঞান)সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সুনামের সাথে অর্জন করেন।

কর্মজীবন: ১৯৫৯ সালের গোড়ার দিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ফিরে আসেন সিরাজগঞ্জ জেলায়। সে বৎসরই সিরাজঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহপুর মাদ্রাসায় মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি স্বীয় কর্মজীবন শুরু করেন। অতঃপর উক্ত জেলাধীন আলিমপুর, বেতুয়া মাদ্রাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সাথে ইহতিমামের গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। আল্লামা ছলিম উদ্দিন কাসেমীর ইলমী কর্মদক্ষতা ছিল ঈর্ষনীয়। ঈমানী দৃঢ়তা ছিল আকাশ চুম্বী। ১৯৮৪ সালে আরেক ক্ষণজন্মা রাজশাহীবাসীর প্রাণের স্পন্ধন আল্লামা মুহম্মদ মিয়া কাসেমী রহ. এর সুনজরে আসেন আল্লামা ছলিম উদ্দিন। মুহম্মদ মিয়া কাসেমী রহ. তাঁকে নিয়ে আসেন স্বীয় হাতে গড়া প্রাণের প্রতিষ্ঠান ‘আল জামিয়া আল ইসলামিয়া আল্লামা মুহম্মদ মিয়া (ইসলামিয়া মাদ্রসা) রাজশাহী’তে। তাঁকে স্বহস্তে বসিয়ে দেন সর্বোচ্চ আসন- ইহতিমামের দায়িত্বে। এ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজশাহীবাসীর সাথে তাঁর পথচলা। এ প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ করেন। পৌঁছে দেন সর্বোচ্চ ক্লাস ‘দাওরায়ে হাদীস’ পর্যায়ে। তিনি এ গুরু দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দরস-তাদরীসসহ ইলমী আমলী দ্যুতি ছড়াতে থাকেন এ অঞ্চলে। তারই ধারাবাহিকতায় ইহকালীন ও পরকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবৎ শাহমখদুম দরগাহ মসজিদে কুরআনুল কারীমের নিয়মিত তাফসীর, রাজশাহী পদ্মতীরে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহের দীর্ঘকাল ব্যাপী ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।


ইবাদত-বন্দেগী: তিনি অত্যন্ত সাধাসিধে ও পরহেজগার মানুষ ছিলেন। মাদ্রাসা মসজিদের সাথে তাঁর মন লাগানো ছিল সর্বদা। সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নামায আদায় করতেন। তেলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ তাঁর নিত্যদিনের আমল ছিল। জীবনে কয়েকবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। নিকট ও দূরের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার মুরুব্বীও ছিলেন তিনি। জীবনে কখনোই তাঁর কোন ঋণ ছিল না। নিজস্ব জমি জায়গা, বাড়ীঘর করার মনোবাসনা তাঁর জীবদ্দশায় কখনো তাঁর মণিকোঠায় উঁকি মারেনি। জীর্ণশীর্ণ ভাড়া বাসায় সারাটি জীবন কাটিয়ে দেন। সময়ের কাজ সময়েই করে নিতেন। সময়ুনুবর্তিতায় ছিলেন আপোসহীন। সর্বদা তিনি ওযূ অবস্থায় এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top