ঘুষ দিয়েও চাকরি মেলেনি শাহানাজ বেগমের ভাগ্যে

শহীদুল হক সরদার, নাটোর | প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৫১; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৬

ভুক্তভোগী শাহনাজ বেগম

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককে ছয় লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও ‘আয়া’ পদে চাকরি হয়নি শাহনাজ বেগম নামের এক নারীর। অথচ ঘুষের এই টাকার যোগান দিতে গিয়ে জমিজায়গা বিক্রি, ধারকর্জসহ উচ্চসুদে ঋণ করতে হয়েছিল তাঁকে। তার পরও চাকরি হয়নি তার। এখন ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন শাহানাজ বেগম।

এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ গুরুদাসপুর থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ আগষ্ট শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে ওই অভিযোগ দেন।

শাহানাজ বেগম উপজেলার সোনাবাজু গ্রামের আছাদ সরদারের স্ত্রী। বিদ্যালয় সংলগ্ন তাঁর বসতবাড়ি। তাঁর স্বামী পেশায় কৃষি শ্রমিক। সংসারে স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান রয়েছে।

ভুক্তভোগী শাহনাজ বেগম বলেন, বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়ি হওয়ার কারনে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদের সাথে ভালো সম্পর্ক তাঁর পরিবারের। বিদ্যালয়ের ‘আয়া’ পদে তাঁকে নিয়োগ পেতে ৬ লাখ টাকা দাবী করেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ। পরিবারের সুখ আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছয় মাসে আগে দুই কিস্তিতে ছয় লাখ টাকা পরিশোধন করেন শাহনাজ বেগম। টাকা পরিশোধের সময় তাঁর স্বামী আছাদ সরদার, চাচা শ্বশুর নাজিম উদ্দিন ও সেন্টু সরদারসহ তাঁর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৫ আগষ্ট চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া হলেও আয়াপদে নিয়োগ দেওয়া হয় পাশের পাটপাড়া গ্রামের খোদেজা বেগম নামের এক নারীকে। খোদেজা বেগম প্রধান শিক্ষককের আত্মীয় বলে অভিযোগ করেন শাহানাজ বেগমের স্বজনরা। ঘুষের টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শাহানাজ বেগমের আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার মানুষ। বিপাকে পড়ে ঘুষের ৬ লাখ টাকার মধ্যে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেন প্রধান শিক্ষক। ঘুষের বাকী টাকা টাকা ফেরতসহ প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবী জানিয়ে গুরুদাসপুর থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগদেন চাকরি বঞ্চিত শাহানাজ বেগম।

শাহানাজ বেগম ও তাঁর স্বামী আছাদ সরদার বলেন, দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার চলে স্বামীর কষ্টের উপার্জনের টাকায়। প্রধান শিক্ষকের আশ্বাসের কারনে শেষ সম্বল ৩ কাঠা জমি বিক্রিসহ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঘুষের ৬ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ঋনের টাকার সুদ আর ধারকর্জের টাকা শোধ করতে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। তার পরও চাকরি মিলেনি। ফেরত দেওয়া হচ্ছেনা ঘুষের অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা। প্রধান শিক্ষকের এই প্রতারণার বিচার দাবী করেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি।

প্রধান শিক্ষক মো আব্দুল মজিদ বলেন,‘ নিয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য শাহানাজ বেগমের কাছ থেকে ৬ লাখ নয়, ৩ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারনে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। পদবঞ্চিত হয়ে ৬ লাখ টাকা দাবী করা হচ্ছে তাঁর কাছ থেকে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন জানান, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন। তবে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ চাকরির নামে ঘুষ বাণিজ্য একটি অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top