নাটোরে ভূয়া বিকাশ নাম্বারে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার কোটি টাকা গায়েব!

মো. শহীদুল হক সরকার, নাটোর | প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৩৭; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৯

ফাইল ছবি

নাটোরে দুই হাজার ৯ জন বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীর মাসিক ভাতার প্রায় কোটি টাকা ভূয়া বিকাশ নম্বরে পাঠানোর ফলে গায়েব হয়ে গেছে। এটা কোন ভুল, না কি কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে কোন চক্র তার সঠিক কোন ব্যাখা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে। সমাজসেবা কার্যালয়ের স্থানীয় কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিকাশ এজেন্ট এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দুষছেন।

বঞ্চিত এসব অসহায় প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক নারী পুরুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন ভাতার টাকার জন্য নিয়মিত স্থানীয় সমাজ সেবা কার্যালয়ে ছুটে আসছেন। টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সমাধান দিতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সদর দপ্তরে বঞ্চিত দুই হাজার ৯ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। দুই হাজার ৯ জনের এক অর্থ বছরের ভাতার পরিমান এক কোটি ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা হলেও নাটোর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহাদৎ হোসেন বলেছেন, এরা সবাই গত অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়েছেন। মোবাইলে টাকা পাঠানো শুরু করার পর কেউ নয় মাসের কেউ বা ছয় মাসের টাকা পাননি।

নাটোর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলার দুই হাজার ৯ জন বঞ্চিতের মধ্যে লালপুর উপজেলার ৮০১জন, নলডাঙ্গার ৫৬৩জন, নাটোর শহরের ১৯০, সদরের ১৪০, বাগাতিপাড়ার ১৭৭, গুরুদাসপুরের ৮০ ও বড়াইগ্রামের ৫৮জন। বঞ্চিত দুই হাজার ৯ জনের মধ্যে ১১৭৬ জন বয়স্ক, ৩৬৮ জন বিধবা ও ৪৬৫ জন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রয়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাটোর শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার মৃত দুখু মিয়ার স্ত্রী রত্না বেওয়ার (৭৯) দুনিয়াতে কেউ নাই বললেই চলে। সরকারের করে দেয়া একটি টিনের ঘরে তার বসবাস। এক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহি কোরআন শিক্ষা দিতেন। বয়সের ভারে এখন সেটাও বন্ধ। সংসার চালানোর খরচ যোগানোর কোন পথ নেই।

তিনি বলেন, ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা পেতাম। মোবাইল একাউন্ট খোলার পর থেকে আর টাকা পাই না। বার বার সমাজ সেবা অফিসে গিয়েও কোন সমাধান পাইনি। কেউ দায়িত্ব নেয় না। একে অপরকে দোষেন। দোষ যারই হোক আমার মত অনেকেরই এই টাকাই চলার পথে একমাত্র আয়। সেটা বন্ধ হওয়ায় আমরা বিপদে আছি।

সোমবার সকাল ১১টার সময় জেলা কার্যালয়ের নিচে রাখা রিকশায় বসে এসব বিষয়ে চেচামেচি করতে থাকা আব্দুর রব জানান, তার শাশুড়ি শহরের মল্লিকহাটি মহল্লার জুলেখা বেওয়ার টাকা জনৈক আভা রানী ভদ্র’র মোবাইলে চলে যাচ্ছে, তারা টাকা পাচ্ছেন না। এ পর্যন্ত তিন মাসে ১৮ বার শহর অফিসে এসেছেন। সমস্যার সমাধান তো হয়নি, কোন সুপরামর্শও পাননি। তার মতোই দুই হাজার ৯ জন বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা ভূয়া বিকাশ নম্বরে পাঠানোর ফলে গায়েব হয়ে গেছে।

শহর সমাজ সেবা অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক বাদ দিয়ে যখন মোবাইলে টাকা পাঠানোর সিন্ধান্ত হয় তখন এত কম সময় দেয়া হয়েছে যে আমরা সারারাত অফিস করেছি। রাত দুইটার সময়ও ফোনে বিকাশ নাম্বার নিয়েছি। যে যেভাবে পারে বিকাশ নাম্বার সংগ্রহ করে দিয়েছে। বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই হয়ত এমনটা ঘটেছে। যারা বিকাশ একাউন্ট খুলে দিয়েছে তারা কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। আমরা যে নাম্বার পেয়েছি সেটাই পাঠিয়েছি। এখন কোন নাম্বার ভুল, কোনটা বন্ধ আবার কোনটার হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না।

নাটোর জেলার বিকাশ এজেন্ট মিজানুর রহমান সব দায় অস্বীকার করে বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় তাদের যে নম্বর দিয়েছে তারা সেই বিকাশ অ্যাকাউন্টগুলোই খুলে দিয়েছেন মাত্র। সম্পূর্ণ নম্বর ভুল অথবা ডিজিট ভুলের দায় স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজনের। এখানে তাদের কোনো ভুল নেই।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেছেন, কোন পক্ষ দায় না নিলে তো চলবে না। নাটোরের দুই হাজার ৯ জন অসহায় ভাতাভোগী যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতা প্রকল্পের উপ পরিচালক দেবব্রত দাস বলেন, “যে সব ভূয়া মোবাইল নম্বরে টাকা চলে গেছে সেগুলো সনাক্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বিটিসিএল এর সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই সাথে আগামী দিনে আর যেন কেউ এভাবে টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে।”

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top