প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ‘ব্যর্থ উদ্যোগ’: গ্রিনপিসের গবেষণা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:৩৭; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৩

ফাইল ছবি

রিসাইক্লিং একটি জনপ্রিয় বর্জ্য অপসারণের প্রক্রিয়া। পরিবেশ দূষণ রোধে সবাই ঝুঁকছে রিসাইক্লিং এ। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মাত্র ২.৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার হয়েছে, শতাংশের হারে যা মাত্র ৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৪ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের সাড়ে ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং দিন দিন কমছেই।

পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিস ইউএসএ-র নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ প্লাস্টিকই রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

সংগঠনটির 'সার্কুলার ক্লেইমস ফল ফ্ল্যাট এগেইন' শীর্ষক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মাত্র ২.৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার হয়েছে, শতাংশের হারে যা মাত্র ৫ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের প্লাস্টিক প্যাকেজিংই ইলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনস নিউ প্লাস্টিক ইকোনমি (ইএমএফ এনপিই) ইনিশিয়েটিভের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না।

এর আগে ২০১৪ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের সাড়ে ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৮ সালে পুনর্ব্যবহার করা হয় ৮.৭ শতাংশ প্লাস্টিক। প্রাক্কলন করা হয়েছিল, ২০২১ সালে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার ৫-৬ শতাংশে নেমে আসবে।

২০১৮ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য চীনে রপ্তানি করে সেগুলোকে পুনর্ব্যবহার হিসেবে গণ্য করে। যদিও এই বর্জ্যের বড় একটা অংশই পোড়ানো বা ফেলে দেয়া হয়েছিল।

ইএমএফ এনপিই মানদণ্ডে একটি পণ্যকে 'পুনর্ব্যবহারযোগ্য' শ্রেণিভুক্ত করতে হলে সেটির রিসাইক্লিং রেট অবশ্যই ৩০ শতাংশ হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পুনর্ব্যবহারযোগ্য দুটি প্লাস্টিক হলো—পিইটি #১ ও এইচডিপিই #২, যার প্রচলিত নাম বোতল ও জগ। এই দুটি প্লাস্টিকের কোনোটিইই ইএমএফ এনপিই মানদণ্ড উৎরাতে পারেনি। প্লাস্টিক দুটির পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ হার যথাক্রমে ২০.৯ শতাংশ ও ১০.৩ শতাংশ। বাকি সব ধরনের প্লাস্টিকের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের হার ৫ শতাংশের কম।


ছবি: সংগৃহীত
এদিকে ২০১৮ সাল থেকে মার্কিন প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে চীন। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প প্রসারিত হওয়ার এবং ব্যয় কমার সাথে সাথে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এমন প্লাস্টিকের উৎপাদন বেড়েই চলেছে।

গ্রিনপিস ইউএসএর প্রচারক লিসা র‍্যামসডেন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, শিল্প গ্রুপ ও বড় বড় কর্পোরেশোন রিসাইক্লিংকে সমাধান হিসেবে নিতে চাইছে। কিন্তু এটুকু করেই তারা নিজেদের কাঁধ থেকে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেছে। রিসাইক্লিং আদতে কাজ করে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

লিসা র‍্যামসডেন বলেন, কোকা-কোলা, পেপসিকো, ইউনিলিভার ও নেসলের মতো কোম্পানিগুলো বিশ্বে প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরির জন্য প্রধান দায়ী।

গ্রিনপিস ইউএসএর সমীক্ষা অনুসারে, মাত্র দুই ধরনের প্লাস্টিক যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭৫টি ধাতু পুনরুদ্ধার কারখানায় ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়।

প্রথমটি হলো পলিইথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি), দ্বিতীয়টি উচ্চ ঘনত্বের পলিথিলিন (এইচডিপিই)। প্রথমটি পানি ও সোডার বোতল তৈরিতে, দ্বিতীয়টি দুধের জগ, শ্যাম্পুর বোতল ও পরিষ্কারকের বোতল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। মূলত সাত ধরনের প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এগুলোর ১ থেকে ৭নং হিসেবে নামকরণ দেওয়া হয়েছে।

তবে তাত্ত্বিকভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্যের অস্তিত্ব থাকার মানেই যে ব্যবহারিকভাবেও পণ্য রিসাইকেল করা হচ্ছে, এমনটা নয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পিইটি ও এইচডিপিই পণ্যের প্রকৃত পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের হার যথাক্রমে ২০.৯ এবং ১০.৩ শতাংশ। কিন্তু এ ধরনের প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার ২০২০ সালের পর আরও কমেছে।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য অন্য প্লাস্টিকগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুদের খেলনা, প্লাস্টিকের ব্যাগ, পণ্যের মোড়ক, দই ও মার্জারিন টব, কফির কাপ ও খাবারের পাত্র। তবে এগুলো পুনর্ব্যবহারের হার কমে ৫ শতাংশের নিচে দাঁড়িয়েছে। এসবের গায়ে প্রায়ই 'পুনর্ব্যবহারযোগ্য' লেবেল সাঁটা থাকলেও আদতে এগুলো ফেডারেল ট্রেড কমিশনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য হওয়ার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ।

এর কারণ হলো জনসংখ্যার বড় একটি অংশ পায় না এই ধরনের পণ্যের রিসাইক্লিং সুবিধা।

গ্রিনপিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের ধারণাটি ব্যর্থ হওয়ার পেছনে পাঁচটি প্রধান কারণ ছিল।

প্রথম কারণ, প্লাস্টিক বর্জ্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং সেগুলো সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন।

দ্বিতী কারণ, সমস্ত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা গেলেও মিশ্র প্লাস্টিক বর্জ্য একসঙ্গে রিসাইকেল করা যাবে না।

তৃতীয় কারণ, রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া নিজেই পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকর। রিসাইক্লিংয়ের কাজ করার জন্য শ্রমিকদের বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে হয়। এছাড়া রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হয়।

চতুর্থ কারণ, রিসাইকেল করা প্লাস্টিকে বিষাক্ততার ঝুঁকি থাকে।

পঞ্চম ও সর্বশেষ কারণ, রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল।

গ্রিনপিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন প্লাস্টিক সরাসরি রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। তাছাড়া নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করতে খরচ অনেক কম এবং গুণগত মানও অনেক ভালো।

র‌্যামসডেন বলেন, প্লাস্টিকের অতি-ব্যবহার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। ভারতও, অস্ট্রিয়া, পর্তুগালসহ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যে এই পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে গেছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top