পদার্থবিজ্ঞান: আগামীর পৃথিবী নির্মাণে অদৃশ্য স্থপতি

তানজিল হোসেন | প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৫ ১৩:৩৯; আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ২০:৪৬

ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক সভ্যতার প্রতিটি অগ্রগতির মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান, যা কিনা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ অভিযান পর্যন্ত সবকিছুর পেছনে কাজ করছে অদৃশ্য স্থপতির মতো।

আজকের এই ডিজিটাল যুগে প্রতিটি প্রযুক্তির হৃদয়ে স্পন্দিত হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রাবলি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি এই অগ্রযাত্রায় সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে? অনেকের ধারণা, পদার্থবিজ্ঞান শুধু কঠিন সমীকরণ আর গবেষণাগারের সীমাবদ্ধ বিষয়।

কিন্তু বাস্তবে এটি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মোবাইল ফোনের চিপ থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের গতি, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল, এমনকি চিকিৎসায় ব্যবহৃত MRI মেশিন—সবই পদার্থবিজ্ঞানের সাফল্য।

আজকের উদ্যোক্তারা এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন স্টার্টআপ, যা সমাধান দিচ্ছে বাস্তব সমস্যার। বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ন্যানোটেকনোলজি, রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোতে পদার্থবিজ্ঞানই হচ্ছে মূল চালিকাশক্তি।

গুগল, টেসলা, স্পেসএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গবেষণায় পদার্থবিদদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই জ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে? বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা এখনও অনেকাংশে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষানির্ভর।

গবেষণার সুযোগ, আধুনিক ল্যাবরেটরি এবং শিল্পের সঙ্গে একাডেমিয়ার সংযোগের অভাব আমাদের পিছিয়ে রাখছে। তবে আশার কথা হলো, কিছু তরুণ উদ্যোক্তা ও গবেষক সৌরশক্তি, ন্যানোটেকনোলজি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করছেন।

সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বাড়লে এই প্রচেষ্টা আরও বেগবান হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানকে শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ছোট ছোট প্রকল্প, বিজ্ঞান মেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টার্টআপ ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষকদেরও আধুনিক গবেষণাধর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।

পদার্থবিজ্ঞান শুধু একটি বিষয় নয়, এটি একটি দর্শন—যা আমাদের সমস্যা সমাধানের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। বাংলাদেশকে যদি ডিজিটাল ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হয়, তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জাতীয় নীতির কেন্দ্রে রাখতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব একটি উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ, যা আগামীর পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top