রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন বহাল

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২২ ০৩:২৩; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৩:৩৩

রাবি অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)-এর ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে আজ মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ।

গত ১৬ মার্চ আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের তারিখ (৫ এপ্রিল) ধার্য করেছিলেন বিভাগ। সে অনুসারে আজ সকালে রায় দেওয়া হয়।

রায়ের পর অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবাকে হারিয়েছি ১৬ বছর হলো। দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর হলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাব।’

অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুজন হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেছিলেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এসবের ওপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। অষ্টম দিনে গত ১৬ মার্চ শুনানি শেষ হয়।

আপিল বিভাগে আসামিপক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পরে আজ আমরা যে রায় পেয়েছি তা আমাদের কাছে সত্যিই আনন্দের দিন একই সাথে বেদনার দিনও বটে। কেননা, অধ্যাপক তাহের স্যারকে আমরা কোনোদিন ফিরে পাবো না। কিন্তু এই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাঁর আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। শুধুমাত্র প্রমোশনের জন্য একজন শিক্ষককে হত্যার মতো একটি জঘন্যতম ঘটনায় আজকের এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেই সাথে এটি প্রমাণিত হলো যে, অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে তা থেকে পার পাবার সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তাহের স্যার সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের সমাজে একটি বার্তার আভাস দিয়ে গেল, সত্যের একদিন না একদিন জয় হবেই। আমরা চাই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর কোনো সময় যেন না ঘটে। আর কোনো প্রাণ যেনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে না যায়। এটা একটা পবিত্র অঙ্গন। আমরা চাই সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হোক। মানুষ সকল ধরনের হিংসা ও খুনের মতো অন্যায় ও জঘন্য কাজ থেকে দূরে থাকুক।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের লাশ। ৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা করেন।

২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে বেকসুর খালাস দেন।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি অভিযুক্তরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল দুজনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।





বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top