ভর্তির আসন কমিয়ে সমালোচনার মুখে রাবি প্রশাসন

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২২ ২১:৫২; আপডেট: ৪ মে ২০২৪ ২০:২১

ফাইল ছবি

শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ঠিক রেখে, গবেষণা ও গুনগত শিক্ষার মান সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখা এবং পাঠদান দ্বিমুখী করার যুক্তি দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে আসনসংখ্যা (কোটা বাদে) মোট আসন ৪ হাজার ১৭৩টি থেকে কমিয়ে ৪ হাজার ৫টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগে মোট ১৬৮টি আসন কমানো হয়েছে। যার মধ্যে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তত্ত্বীয় বিষয়গুলোই বেশি। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন মহল থেকে নানা রকম আলোচনা- সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কর্তৃপক্ষের এ ভাবনাকে কেউ কেউ 'সাধুবাদ' জানালেও বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা, গ্রন্থাগার সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ আছে। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবকাঠামো না বাড়ানোর কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যার ফলে উচ্চশিক্ষার গুনগত মান এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশসহ শিক্ষার্থীদের আবাসিক ও অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে এরই মধ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব হয়েছে দুইটি পক্ষ। কোনো কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সাধুবাদ জানালেও সমালোচনাও আছে অনেকের মধ্যে।

সমালোচকরা বলছে, গবেষণা ও‌ শিক্ষার মান সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখতে সবার আগে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। পর্যাপ্ত গবেষণা বাজেট। শিক্ষা-গবেষণার উপযোগী মানসিক সক্ষমতা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করণ।সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক কতৃক গবেষণা ও একাডেমিক শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির প্রচেষ্টাই পারে ভালো গবেষণা ও গুনগত শিক্ষার মান সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখতে। আসন কমানো কোনো যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে না বলে মনে করছেন তারা।

প্রশাসনের এমন যুক্তি পুরোপুরি মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.কুদরত-ই-জাহান।

তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাজেট ২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি না করে শুধুমাত্র সিট কমিয়ে আনলে শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে না। গবেষকদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে, গবেষণায় মোট বাজেটে ০.১৯ শতাংশের কম বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার গুনগত মান আর ভালো মানের গবেষক তৈরি সম্ভব না। শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত, খাদ্যের মান বৃদ্ধি, গবেষণায় প্রণোদনা ও বেতন ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করতে না পারলে সিট কমানোর উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে মনে করেন তিনি। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে সেমিস্টার সিস্টেমে এক ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে টেক-কেয়ার করা মুশকিল হয়ে যায়।

তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন খ্যাতনামা গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাবের অধ্যাপক ড.সালেহ হাসান নকিব।

তিনি বলেন, ঢাবি ও রাবির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সমান হলেও ফ্যাকাল্টি মেম্বারের সংখ্যা এখানের চেয়ে ঢাবিতে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুব বেশি পিছিয়ে আছে। ছাত্র-শিক্ষকের যে আদর্শ অনুপাত থাকা দরকার সেই দৃষ্টিতে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাবি পেছনে অবস্থান করছে। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক বিভাগের জন্য ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক নকিব বলেন, সিট কমানোতে গবেষণায় উন্নতি হবে বলে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে এটা মানতে নারাজ তিনি। তবে তিনি এটা মনে করেন যে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রতি নজর রাখা ও পঠন-পাঠনে এত অল্প শিক্ষকের পক্ষে কঠিন। আর ছাত্র-শিক্ষকের আদর্শ অনুপাত ঠিক রাখা ও ম্যানেজে সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে সিট কমানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, দুবছর পরেই দেখা যাবে যে সিট কমানোতে গবেষণায় কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা। আমি মনে করি এটা সময় পরে অ্যাপ্রিশিয়েবল কোনো গবেষণা দেখা যাবে না। তার মানে সিট কমানোর প্রভাব গবেষণায় পড়বে বলে মনে হয়না।

এদিকে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো তীব্র আপত্তি রয়েছে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ব্যাপারে।

আপত্তির কথা জানিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান বলেন, গবেষণা ও শিক্ষার মান সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ বিভাগের ১৬৮টি আসন কমানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন কিন্তু খ্যাপ মারা সান্ধ্য কোর্স চলবে 5g স্পীডে। গবেষণা ও শিক্ষার মান সুষ্ঠু রাখার যুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবচেয়ে বেশি আসন কমিয়েছে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তত্ত্বীয় বিষয়গুলোর। ইতিহাস, বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলো থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ১০০টির বেশী আসন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ থেকে বাদ পড়েছে ৩০ টি আসন। কিন্তু আশ্বর্চজনকভাবে ব্যবসায় অনুষদ থেকে ১টি আসনও বাদ পড়ে নাই।

তিনি বলেন, গবেষণা ও শিক্ষার মান বজায় রাখতে গবেষনার বরাদ্দ বাড়ানো সহ অন্য কোনো প্রস্তাব না দিয়ে, গবেষনাসংক্রান্ত তত্ত্বীয় বিষয়গুলোর আসন সংখ্যা কমানো টা কিসের ইংগিত বহন করে! বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বীয় বিষয়গুলো পড়তে নিরুৎসাহিত করছে শুধু বিপনন কেন্দ্রীক বিষয়গুলো পড়ানোর।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ টি বিভাগের ১৬৮ আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসন। বিভাগগুলোর মধ্য কলা অনুষদের ইতিহাস বিভাগে আসন কমেছে ১০টি, বাংলা বিভাগে ২০টি ও নাট্যকলাতে ৫টি আসন কমেছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগে আসন কমেছে ১০টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কমেছে ১০টি, সমাজকর্ম বিভাগে ২০টি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ২০টি, লোকপ্রশাসনে ১০টি, নৃবিজ্ঞানে ৬টি ও ফোকলোরে কমেছে ৬টি আসন।

এ ছাড়া জীববিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান বিভাগে কমেছে ৫টি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে কমেছে ১৫টি আসন। প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১০টি। ভূ-বিদ্যা অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে আসন কমেছে ৬ টি।

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top