আসন ভাগ নিয়ে কিংস পার্টিগুলোর সঙ্গে কী ধরণের ‘সমঝোতা’ হচ্ছে?

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩১; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৭

- ছবি - ইন্টারনেট

৭ জানুয়ারি ২০২৪ ‘নির্বাচন’ নামের যে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়েছে তাকে সাজিয়ে তুলতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য দলের আসন ভাগবাটোয়ারা আলোচনার খবরাদি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

সর্বশেষ জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগ তার শরিক ১৪ দলের জন্যে বরাদ্দ করেছে ৭টি আসন; আসলে বরাদ্দ করেছে তিন দলের জন্যে। এগুলোকে বলা হচ্ছে ‘আসন সমঝোতা’। শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কীভাবে আসন ভাগ করবে সেটা আসলে ধর্তব্যের বিষয় নয়। আগের দুই নির্বাচনেও তাই হয়েছে।

যারা জোট করেছেন এটা তাদের বিষয়। কিন্তু এটা যে সাজানো নির্বাচন সেটা বোঝা যায় যখন এই শরিকরা ক্ষমতাসীন দলের কাছে বিজয়ের নিশ্চয়তা চাইছে, আর তার জন্যে কথিত ‘স্বতন্ত্রদের’ প্রার্থীতা প্রত্যাহার চাইছে।

এর পাশাপাশি আলোচনা হচ্ছে গত দুই সংসদের কথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে। এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে যা ঘটছে তা বেশ আকর্ষণীয়। দুই পক্ষ আসন ভাগ বাটোয়ারা করতে বারবার বৈঠক করছে, কিন্তু দুই পক্ষই এই নিয়ে একটা ‘রাখঢাকের’ ভঙ্গি নিচ্ছে।

বুধবার জাপার বনানীর কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা দুটো দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

যেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বড় দল এবং তারা নির্বাচন করছে, আমরাও নির্বাচন করছি। এই দুটি দলের মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে জন্য আমরা একটা রিলেশন ডেভেলপ (সম্পর্ক উন্নয়ন) করছি।’ এই সব আলোচনায় দলের প্রধান জি এম কাদের-এর অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। এই নিয়ে দলের মহাসচিব একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন - সময় এলে তার দলের চেয়ারম্যান কথা বলবেন। গণমাধ্যমগুলো সেই সময়ের জন্যে অপেক্ষা করছে নাকি খোঁজ নেবার চেষ্টা করছে তা আমরা জানি না।

‘নির্বাচন সুষ্ঠু করা’ নিয়ে জাপা এবং আওয়ামী লীগের আলোচনা একদিনে শেষ হয়নি, দুই দিনেও হচ্ছে না। শুধু তাই নয় ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায়, সংসদে একত্রে থাকবার পরেও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে এখন দফায় দফায় আলোচনা করতে হচ্ছে, কিন্তু একথা বলতে জাতীয় পার্টির নেতারা দ্বিধান্বিত বা লজ্জিত যে তাঁরা আসন নিয়ে ‘সমঝোতা’ করছেন।

জাতীয় পার্টির চাওয়া হচ্ছে কমপক্ষে ৪০টি আসন। কারন বোঝা দুরূহ নয়, তারা সংসদে ‘বিরোধী দল’ হতে চায়। অতীতে ২২ আসন পেয়ে তাঁরা অখুশি বা উদ্বিগ্ন হয়নি। এখন জাপা নেতারা অন্ততপক্ষে ১০ শতাংশ আসন চান, কেননা সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রচলিত কনভেশন হচ্ছে বিরোধী দল হতে হলে কমপক্ষে ১০ শতাংশ আসন থাকা। তাদের এই চাহিদা তৈরি হয়েছে আশঙ্কা থেকে এই সাজানো নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কোনও একটি কিংস পার্টিকে ‘বিরোধী দলের’ অবস্থানে নিয়ে যায় কীনা।

আমার প্রশ্ন বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর কাছে, এই যে আসন ভাগ বাটোয়ারার হিসেব তারা জানাচ্ছেন সেখানে এই কিংস পার্টিগুলোর সঙ্গে কী ধরণের ‘সমঝোতা’ হচ্ছে তার খবর অনুপস্থিত কেনো? কার সঙ্গে এই ‘সমঝোতা’ হচ্ছে? কারা এই সমঝোতা করছে? কি শর্তে কত আসনে সমঝোতা হচ্ছে? স্মরণ করা যেতে পারে ১৯ নভেম্বর তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী এবং মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

 ঐ দিন দলের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে তৈমুর খন্দকার বলেছিলেন, “আগামীতে তৃণমূল বিএনপি হবে দেশের প্রধান বিরোধী দল।” একই কথা তিনি বলেছেন ৮ ডিসেম্বর। সবই যখন ভাগ বাটোয়ারার বিষয়, তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এই দলগুলোর দিকে নজর দেবার কথা ভেবে দেখতে পারে।

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top