লেখকদের রঙ্গ-রসিকতা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৪; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫০

লেখকরা আর দশজন মানুষ থেকে কিঞ্চিত আলাদা। তাই তাদের যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, রঙ্গ-রসিকতাও একটু আলাদা। কোনো কোনো সময় এসবে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিস্থিতির ‘শিকার’ হন শুধু। এসব পরিস্থিতি স্বীকার বা অস্বীকারও করতে হয় না অনেক লেখকের। শুধু উৎসাহী কেউ উঁকি দিলে দেখতে পান দূর দিগন্ত!

সঙ্গত কারণেই এই লেখকের নাম বলা যাবে। বাংলা একাডেমির পুকুরপাড়ে ছিল স্টল। একজন পাঠক এসে যেই না একটি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে গেলেন, হাত থেকে বই ছোঁ মেরে বইটি নিয়ে নিলেন লেখক।

পাঠক আবার সেই লেখককে চেনেন না। এমন আচরণে হতভম্ব পাঠক বললেন, ভাই, এটা কী করলেন?

বিগলিত হেসে লেখক বললেন, অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য নিয়েছি।

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পাঠক জবাব দিলো, আমি বইটি নেব, এটা কাকে বলেছি!

বইমেলার বাইরে পোর্ট্রেট এঁকে দেওয়ার চল ছিল তখন। একশ’ থেকে তিনশ’ টাকার বিনিময়ে।

এক কবির ইচ্ছা হলো, চায়ের টাকা বাঁচিয়ে নিজের একটা ছবি আঁকিয়ে নেবে। কিন্তু চড়ামূল্যে হতাশ হলো সে। শিল্পীর উদ্দেশে বলল, স্ট্যাম্প সাইজে একটা ছবি আঁকলে কত টাকা নেবেন!

প্রয়াত কবি নূরুল হক আজিজ সুপার মার্কেটে আসতেন। পুলক হাসান সম্পাদিত ‘খেয়া’ লিটল ম্যাগাজিনের কাজ তদারকি করতেন। তাকে মজা করে বলতাম, এরশাদের কবিতা ছাপবেন না? জবাবে তিনি বলতেন, এরশাদের কবিতা অনেক আগেই ছাপা হয়ে গেছে; তুমি দেখোনি!

প্রসঙ্গত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের নামে লেখা কবিতা ছাপতে বাধ্য করতেন। বরাবরের মতোই কবিতাগুলো লিখে দিতেন দেশের কয়েকজন বরেণ্য কবি!

জীবনানন্দ দাশের একবার দেখা করেছিলেন শামসুর রাহমান। পুরনো কিছু কবিতা জীর্ণশীর্ণ হয়ে আছে—জীবনানন্দ দাশের এমন মন্তব্যে শামসুর রাহমান হেসে বললেন, ধূসর পাণ্ডুলিপি! বলাবাহুল্য, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থের নাম।

গল্পটা বলেছিলেন ছড়াকার-শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন। এক কবির সঙ্গে আরেক কবির দেখা হলো পথে। বই হাতে কবি থামালেন অন্যজনকে। বললেন, ভাই, আমি আপনাকে একটি বই উৎসর্গ করেছি।

শুনে তো অন্য কবি খুশি। বই উপহারও পেলেন এক কপি। কিন্তু ভেতরে দেখলে প্রতিটি কবিতা আলাদা আলাদা ব্যক্তিকে উৎসর্গ করা। তিনি নিজের নামে উৎসর্গ করা পাতা ছিঁড়ে নিলেন। এরপর বইটা ফেরত দিয়ে বললেন, আমার অংশটা নিয়ে গেলাম!

এতক্ষণ যা শোনানো হলো, সবই জীবন থেকে নেওয়া। লেখকদের যাপিত জীবনের গল্প। সর্বশেষ একটি ‘মির্মম’ কৌতুক বলে বিদায় নেই।

এক লেখক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলছেন, আমার উপন্যাসটার ফিনিশিং টাচ দেই কীভাবে?
জবাব পেলেন—কেন, ম্যাচের কাঠি দিয়ে।

লেখক: শফিক হাসান (মূল লেখাটি ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়।)



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top