আগামীর আন্দোলন

বিএনপি এবার কীভাবে এগোবে, প্রশ্ন তৃণমূলের

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২৪ ১০:০৮; আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৭

ছবি : ফাইল

জাতীয় নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস পর এসে সরকারবিরোধী একদফার আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে গত মাসে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে দলটি।

তবে আগামীর সেই আন্দোলনের কৌশল কী হবে, বিএনপি এবার কীভাবে এগোবে, তা জানতে চায় দলটির তৃণমূল। তাদের শঙ্কা, ক্ষমতাসীনরা অতীতের মতো এবারও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দমন-পীড়নের মাধ্যমেই আন্দোলন দমন করতে চাইবে। এ কারণে প্রধান শরিক বিএনপির কাছে একই জিজ্ঞাসা যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদেরও। বিএনপি বলছে, দলীয় ফোরাম ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করা হবে।

বিএনপির বিগত আন্দোলনের ব্যর্থতায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, আগামীর আন্দোলনে কৌশলগত পরিবর্তন ছাড়া বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের জন্য লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে। বিএনপি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে রয়েছে। কিন্তু তাদের যে লক্ষ্য অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন, সেটা তারা আদায় করতে পারেনি। বরং এই আন্দোলনের পথে দলটির দাবি অনুযায়ী সারা দেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের আন্দোলনও সফলতা পায়নি। এ আন্দোলন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দলটির তৃণমূল। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছেন। মামলা-হামলা, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা কারাগারে গেছেন। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও আইনি জটিলতায় অনেকে এখনো

ঘরছাড়া। আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন ছাড়া মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। কিন্তু তার পরও আন্দোলনে রাজপথে থেকে কর্মসূচি পালন করেছেন। আগামীতেও যে কোনো পরিস্থিতিতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিতে মাঠে থাকার প্রত্যয় তাদের।

১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির দাবি, ২০০৯ সালের পর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৪টি মামলায় ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ১ হাজার ৬৪৫ মামলায় প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব তুলে ধরে গত মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ ব্যক্তি গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাউকে মৃত, কাউকে অনেক দিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আবার অনেকের কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ এখনো অনেকে নিখোঁজ। এ ছাড়া অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী নানাভাবে সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।

বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা রাজপথে ছিলেন, আছেন এবং আগামীতেও থাকবেন। তবে আগামীর আন্দোলনের কৌশল কী হবে, কর্মপরিকল্পনা কী হবে, কেন্দ্রের কাছে তা জানতে চান তারা। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মঈনুল হাসান সাদিক বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে রয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জিত না হয়, ততক্ষণ আন্দোলন চলমান থাকবে। এ আন্দোলনের কৌশল-কর্মপরিকল্পনা কী হবে, সেটা কেন্দ্র ঠিক করবে।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপির বিগত আন্দোলনেও জনসমর্থন ছিল, এখনো আছে। আগামীতে যে কোনো পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এলে আমরা অতীতের মতো তাতে অংশ নেব এবং সরকারের পতন নিশ্চিত করব।

সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে গত ১২ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত যুগপতের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে শরিকরা বিভিন্ন প্রস্তাব ও মতামত দিয়েছেন। আগামীতে বিএনপি কীভাবে এগোতে চায়, টার্গেট কী, তা জানতে চায় গণতন্ত্র মঞ্চ। তিন-চার বছর পরে গিয়ে কি আন্দোলনকে বেগবান করবে, নাকি আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে এখনই আন্দোলন শুরু করবে, সে বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চায়। যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ এই মিত্র জোটকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেনি বিএনপি। বৈঠকে আগামীর আন্দোলন সফলে বিএনপিকে বিগত আন্দোলন ব্যর্থতার যথাযথ কারণ অনুসন্ধানেরও তাগিদ দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপতের কাঠামো ধরে রেখে ঈদুল আজহার পর ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। জাতীয় নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেলেও এখনো আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করেনি দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি আগামীতে কোন পথে হাঁটবে, আন্দোলনে কৌশলগত কোনো পরিবর্তন হবে কি না, নেতৃত্বের ধরন কেমন হবে—এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

তথ্যসূত্র: দৈনিক কালবেলা 



বিষয়: বিএনপি


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top