ওলামা দলকে ‘রাজপথের শক্তি’ বানাতে চায় বিএনপি

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৪ ০৭:২৯; আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৬

ছবি : ফাইল

সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে দলের অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলকে ছাত্রদল-যুবদলের মতো ‘রাজপথের শক্তি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। একই সঙ্গে সংগঠনটিকে জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রচলিত ইসলামপন্থি দলগুলোর বিকল্প হিসেবেও গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের উদ্দেশ্য, ইসলামী স্কলারদের পাশাপাশি যাতে ছাত্র-যুবকরা বিশেষ করে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রদল নেতারা ওলামা দলে অন্তর্ভুক্তিতে আকৃষ্ট হন, তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে আগামীতে শুধু মোনাজাত আর দোয়া মাহফিলের মধ্যে সীমিত থাকবে না ওলামা দলের কার্যক্রম। তাদের রাজপথের কর্মসূচিতেও সম্পৃক্ত হতে হবে।

ওলামা দল সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার পর তাদের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। যেটা ১০১ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। এরপর তৃণমূল তথা জেলা কমিটি পুনর্গঠনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বে ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে। এসব টিম জেলা কর্মী সম্মেলন সম্পন্ন করে কেন্দ্রে সাংগঠনিক প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এরপর চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ কাউন্সিলের মাধ্যমে ওলামা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের চিন্তা রয়েছে বিএনপির। তখন পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকার ২০১ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। পুনর্গঠন কার্যক্রম শেষে ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে ঢাকায় একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা এবং সদস্য সচিব মাওলানা কাজী আবুল হোসেন বলেন, আমরা আংশিক আহ্বায়ক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে কাজ করছি। পদপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দিতে পারব। কমিটি বিলুপ্ত করে তিন মাস সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার পর গত ২৬ এপ্রিল ওলামা দলের পাঁচ সদস্যের নতুন আংশিক কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। কমিটিতে মাওলানা সেলিম রেজাকে আহ্বায়ক এবং মাওলানা কাজী আবুল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়।

জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে বিএনপি। নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন ও আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক ওই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ‘একমঞ্চ’ গঠন কিংবা যুগপতে শামিল করার প্রস্তাব দেয় কয়েকটি শরিক দল। তবে এর বিরোধিতাও করে দুটি জোট। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘একমঞ্চ’ গঠন কিংবা যুগপতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না বলে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চকে আশ্বস্ত করে বিএনপি। ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতকে নিয়ে যুগপৎ জোটে এমন আলোচনার মধ্যে দলের অঙ্গসংগঠন ওলামা দলকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বিএনপি।

এর অংশ হিসেবে আলেম-ওলামাদের সংগঠন ওলামা দলকে আরও সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করে জামায়াতসহ দেশের প্রচলিত ইসলামপন্থি দলগুলোর বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রখ্যাত আলেম, সুপরিচিত ইসলামী আলোচকসহ ইসলামী স্কলারদের ওলামা দলে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া হাটহাজারী মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, নূরানি মাদ্রাসা, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকসহ মসজিদের ইমামদেরও সংগঠনে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ওলামা দল।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওলামা দলের রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতিতেও আনা হবে আধুনিকতা। এর উদ্দেশ্য হলো, ইসলামী স্কলারদের পাশাপাশি ছাত্র-যুবকরা যাতে ওলামা দলে অন্তর্ভুক্তিতে আকৃষ্ট হয়, তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করা।

ওলামা দলসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতে, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় একসময় ছাত্রদল করা নেতারা পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও অন্য অঙ্গসংগঠনে পদ-পদবি না পেয়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। এসব নেতাদের ওলামা দলে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রদল ও বিএনপির অন্য অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী পরবর্তী সময়ে ইসলামী ভাবধারায় চলে গেছে। গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-খতিব হয়েছেন। তাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ হচ্ছে।

বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, আমরা ওলামা দলকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছি। সারা দেশে বিপুলসংখ্যক ওলামায়ে কেরাম আছেন। আমাদের প্রত্যাশা, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এসব মানুষ আগামীতে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।

দলের সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী ড্যানি বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলকে ছাত্রদল-যুবদলের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

ওলামা দলের সাংগঠনিক জেলা ইউনিট ৭৯টি। এর মধ্যে ৫৯টি জেলায় কমিটি রয়েছে। মানিকগঞ্জ ছাড়া বাকিগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ।

গত বছরের মাঝামাঝি সর্বশেষ জেলা কমিটি দেয় ওলামা দল। বাকি ২০টি জেলার কয়েকটিতে অতীতে কমিটি দেওয়া হলেও বর্তমানে সেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

সূত্র: কালবেলা 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top