খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ করবে বিএনপি 

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৪ ১১:২৯; আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১৫:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। তার নিঃশর্ত মুক্তিসহ বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে না তুলতে পারায় ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলেও। এমন পরিস্থিতে দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।

সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ৩ দিনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। শুক্র অথবা শনিবার ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরুর কথা রয়েছে। পরে ঢাকা ছাড়া সব সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে একই দিনে সমাবেশ করবে। এরপর সব জেলায়ও সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কর্মসূচির তারিখ চূড়ান্ত করতে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা ডেকেছে বিএনপি। সেখানে কর্মসূচি সফলে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সভায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার (আজ) সেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সভা মনে করে দেশনেত্রীকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চক্রান্ত করছে অবৈধ সরকার। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী। এই মামলায় জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের দাবি জানানো হয়েছে। এমন কি পরিবারের পক্ষ থেকে দুবার তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে। সভায় অবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করা হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সূত্রমতে, সভার বেশিরভাগ সময়ই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি প্রণয়নের প্রস্তাব দেন কয়েকজন নেতা। কিন্তু পরে শুধু দলীয় প্রধানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে একই দাবিতে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সেভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা যায়নি-এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আর এজন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের কাছে একটি আবেগের জায়গা। সবকিছু বিবেচনা করে আপাতত ৩ দিনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে আবারও কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।

সূত্রমতে, ঢাকাসহ সব সাংগঠনিক বিভাগ ও জেলার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। সব কর্মসূচিতে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আজকের যৌথ সভায় যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি সাবেক শীর্ষ নেতা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের অংশ নিতে বলা হয়েছে। এ যৌথসভায় কর্মসূচি সফলে আরও নানা নির্দেশনা দেবেন মহাসচিব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। এবং বর্তমান স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশ মুক্ত হোক। সেজন্য যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য দল প্রস্তুত আছে। আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকার যে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেজন্য দল যে কোনো কর্মসূচি দিলে জনগণসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে তা সফল করবে।’

দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নেত্রী হিসাবে পরীক্ষিত। তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি আসবে। তা অবশ্যই আমরা সফল করব। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি থাকবে।’ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এই বয়সে তাকে জেলে কারারুদ্ধ করে, মূলত গণতন্ত্রকে রুদ্ধ করে রেখেছে। সেই নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আবার কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। দল যেভাবে কর্মসূচি দেবে, আমরা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা সফল করব। সেজন্য সব প্রস্তুতিই আমাদের আছে।’

নিরাপত্তাবিষয়ক উপকমিটি গঠনের প্রস্তাব :

এদিকে স্থায়ী কমিটির সভা সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক একটি উপকমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। এ কমিটিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ নিরাপত্তা বিশ্লেষক করে রাখারও প্রস্তাব করেন ওই নেতা। এই কমিটির সদস্যরা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাসহ সার্বিক বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেবে বিএনপিকে। সে অনুযায়ী বিএনপি তা জনগণের সামনে তুলে ধরবে। এই কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।



বিষয়: বিএনপি


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top