২০০০ টাকায় ব্যবসা শুরু, এখন রেস্টুরেন্ট মালিক সোনিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২১ মে ২০২১ ০২:৩০; আপডেট: ২১ মে ২০২১ ০৩:০৯

সোনিয়া আহমেদ সোনী

নাম সোনিয়া আহমেদ সোনী। রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করছেন অর্থনীতি বিষয় নিয়ে। বংশের বড় মেয়ে তিনি। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবার খুব আদরের। উদ্যোক্তা জীবনের আইডল ভাবেন নিজের বাবাকে। কারণ ছোট থেকেই বাবাকে ব্যবসা করতে দেখে আসছেন তিনি। আর সততা ও সরলতা ভাবটাও পেয়েছেন বাবার মাধ্যমে। ছোট থেকেই খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটা কিছু একটা করবে এটা সবাই বলতো।

পাড়ার মধ্যে সব থেকে ভাল ছাত্রী ছিলেন। এমনকি খেলাধুলাতেও ছিলেন সবার সেরা। সোনিয়ার হাত ধরেই ছোট বনগ্রাম আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় পুরো রাজশাহী শহরের মধ্যে স্কাউটিং এ ৪ র্থ হয়েছিল, কারণ সোনিয়া ছিল স্কাউটিং এর দল নেত্রী। মাধ্যমিকের বয়স থেকেই তাঁর সফলতার গল্প শুরু।

বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে একজন সরকারি চাকুরীজীবী হবে। কারন আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য বড় ২ ছেলেকে পড়াশোনা করতে পারেননি। মেয়েকে নিয়ে  অনেক আশা ছিল বাবার। 

এজন্য বিয়ের পরও মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন তিনি। এতে সোনিয়ার স্বামীও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। সোনিয়া অর্নাস ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা দিয়েছেন অন্ত:সত্তা অবস্থায়। আগের দিন পরিক্ষা দিয়ে পরের দিন তিনি সন্তান প্রসব করেন। তিনি কখনোই হার মেনে নেওয়ার মানুষ ছিলেন না। যেকোন পরিস্থিতিতে নিজে শান্ত থেকে সব কিছু সামলান।

গত বছর যখন করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়, সবকিছু লকডাউন করে দেওয়া হয় তখন সোনিয়ার বেসরকারি স্কুলের চাকরিটা চলে যায়। আর স্বামীর এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরিটাও করোনার জন্য বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

উপায় না পেয়ে সোনিয়া নিজের ছোট বোনকে সব খুলে বলেন। পরে বোনের পরামর্শে রাজশাহী চলে আসেন তিনি। রাজশাহী তার বাবার বাসা। আর ঢাকায় শশুর বাড়ি। 

রাজশাহীতে আসার পর বিষন্নতায় ভুগেন কিভাবে তাঁদের দিন যাবে ভেবে। নিজের স্বামীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ আবার নিজের জবটাও নেই।  বাবার বাসায় এসে পড়ে থাকলে তো হবে না। কিছু একটা করতে হবে। এই খারাপ সময়ে সোনিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে উই নামের একটি গ্রুপের খোঁজ পান। আর সেখানে পেয়ে যান মাহবুবা আক্তার জাহান নামের একজনকে। তার কাছে জানতে পারেন উই এর মাধ্যমে তিনি কিছু করতে পারবেন। 

সোনিয়া ২০০০ টাকা দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন।  সেটা ছিল তাঁর স্বামীর কাছে ধার হিসেবে নেয়া। প্রথম অনলাইন থেকে ড্রেস অর্ডার করার পর তিনি খুব বড় ধরনের বোকা বনে যান। কারন ড্রেসগুলো বেশিরভাগ ছিল রিজেক্ট মাল। তাও তিনি হাল ছাড়েননি। পরিশ্রম করে গেছেন নিরলসভাবে। তিনি অনলাইনে শাড়ি, কাঠের গয়না, আমসত্ত্ব, রাজশাহীর খাটি খেজুরের গুড়  বিক্রি করেন কয়েক লাখ টাকার।

আর উই থেকে দেশীয় পণ্যের মূল্যবোধ থেকেই নিজেই একটা দেশীয় ঐতিহ্যের বাংলা রেস্টুরেন্ট বানিয়ে ফেলেন । 

এটা শুধু সম্ভব হয়েছে নিরলস পরিশ্রম ও পরিবারের সমর্থন পেয়ে। কিন্তু তিনি যখন উদ্যোক্তা জীবন শুরু করছিলেন তখন অনেকেই বলেছিলেন- এত পড়াশোনা করে সব বাদ দিয়ে কাপড়ালি হবি। শুরুতে সোনিয়ার বাবাতো তাঁর সাথে ২ মাস কথাও বলেনি। কিন্তু এখন সবাই সোনিয়ার উপর সন্তুষ্ট। 

কারণ তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। 

কিন্তু সোনিয়া এখনো নিজেকে সফল ভাবেন না, কারণ তিনি চান তার রেস্টুরেন্ট হেঁশেল Cafe & Restaurant যেন একটা ব্রান্ড এ পরিণত হয়। রেস্টুরেন্ট এর কয়েক টা শাখা খোলার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি।

 

 

এসকে

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top