বান্ধবীদের অনুপ্রেরণায় পথচলা শুরু নারী উদ্যোক্তা ফারিহার

কে এ এম সাকিব | প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২১ ২১:০২; আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ২২:০০

উদ্যোক্তা ফারিহা আহমেদ।

রাজ টাইমস এর নিয়মিত উদ্যোক্তাদের গল্পের আয়োজনে আজ নতুন একজন নারী উদ্যোক্তার গল্প শুনব আমরা। ফারিহা আহমেদ, পড়াশুনা করছেন ঢাকার ইডেন কলেজে। পাশাপাশি নিজেকে মেলে ধরেছেন উদ্যোক্তাদের জগতে।

রাজ টাইমস: জনাব, ফারিহা আহমেদ, আপনাকে স্বাগতম। আপনি ব্যবসাটা যে ভাবে শুরু করলেন?

ফারিহা আহমেদ: ২৩ নভেম্বর আমার ২য় বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ৩ পাউন্ড কেক বানিয়ে ছিলাম। আর কিছু ফ্রেন্ডদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সবাই কেক খেয়ে অনেক প্রশংসা করেছিল আর মজার ছলেই সবাই বলেছিল বসে না থেকে অনলাইনে বেকিং শুরু করে দিলেই হয়। এই যে মাথাই ভূত চাপল। আর কি বসে থাকা যায়! তারপর থেকে শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন।

রাজ টাইমস: কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? এবং কোন ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে কাজ করার পরিকল্পনা করলেন?

ফারিহা আহমেদ: আসলে আমার উদ্দ্যোক্তা জীবনের শুরুতে আমি একজন নতুন মা। আমার মেয়ের বয়স তখন ৪ মাস।আমার খুব ছোট থেকেই কেকের প্রতি খুব নেশা। আর রান্না বান্নার প্রতি খুব ঝোক। ছোট থেকেই মায়ের রান্না দেখতে দেখতে আয়ত্তে নিয়ে ফেলেছি। তাই আমার সাংসারিক জীবনে এই রান্না বান্না বা ঘর সামলানো সহ বাচ্চাকে সময় দাওয়াটা খুব কষ্টকর হলেও আমার কাছে কিছুটা সহজই মনে হয়েছে।

যখন ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখনও কোন পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত বেশি ভাল ফিডব্যক পাচ্ছি যার কারনে ভবিষ্যতে কিছু করার পরিকল্পনা আছে।

রাজ টাইমস: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইনেই, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল?

ফারিহা আহমেদ: হ্যাঁ, ব্যবসার শুরুটা অনলাইনেই ছিল। মুলত এখন অনলাইনেই চাহিদাটা বেশি।

রাজ টাইমস: কাজ করতে গিয়ে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

ফারিহা আহমেদ: কাজের শুরু তে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু আমি আমার মনের জোর কে শক্ত করে রেখেছিলাম। আমার পরিবারে আমি, আমার স্বামী আর আমার ১১ মাসের কন্যা সন্তান। আজ থেকে ৫ মাস আগে শখ থেকে যখন ব্যবসা শুরু করি তখন আমার বাচ্চার খুব ছোট। আমার হাসবেন্ড এর কোন ধরনের সাপোর্ট আমি পায়নি। এমকি উনি আমার সাথে  এটা নিয়ে খুব মনখুন্ন হতেন। আমাদের ২ টা কাপড়ের শপ আছে। তাছারাও আরও ব্যবসা আছেন। তখন আমি আমার পেইজের ভিজিটিং কার্ড উনাকে শপে রাখার জন্য বললাম।

কিন্তু উনার ব্যক্ত ছিল এতে তার মান যাবে। উনি অনেক সম্মানিত মানুষের সাথে চলাচল করেন আর উনার সহধর্মিনি অনলাইন এ কেক নিয়ে কাজ করবে এটা কোন ভাবেই সম্মানজনক কাজ না উনার জন্য। কিন্ত আমি একদম চুপ থেকে আমার মনের অনুকূলে কাজ শুরু করে দিলাম। ১৫ তারিখ এ প্রথম অনলাইন অর্ডার আসে। আর পর একের পর এক অর্ডার আসতেই থাকে। কিন্তু কেক বেক করা ও অর্ডার প্লেস করার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন।

করোনাকালিন সময় তার উপর আমার ৪ মাসের বাচ্চা। ওকে নিয়ে একা বাজারে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। কাচামান হোম ডেলিভারি নিতাম। কিন্তু কেক এর মোল্ড,বক্স এমন আরও আনুষাঙ্গিক জিনিস আছে যেগুলোর জন্য আমাকে বাজার যেতেই হবে। পরে আমার বাবা মায়ের সাহায্য নেয়। উনারা এসে এসে আমাকে ওগুলা এনে দিতেন।

কিন্ত আলহামদুলিল্লাহ এখন আর কোন সমস্যা হয়না। আর আল্লাহর রহমতে  আমার কাজের ফিডব্যক অনেক ভালো। আর আমার হাসবেন্ড কে অনেক বুঝানোর পর উনি এখন বুঝতে পারে। এখন উনি নিজে থেকেই মানুষকে আমার ভিজিটিং কার্ড দেয়। এটা  আমার কাজ কে আর উৎসাহ দেয়।উনি যখন দেখলেন আমার ঘর, বাচ্চাকে সামলিয়ে বেকিং এর কাজ করছি তখন উনি পুরোপুরি সাপোর্ট না দিলেও  মানা করতেন না। বাচ্চা নিয়ে কাজ করতে অনেক সমস্যা হেয়েছে যেমন আমি রাত ১২ টার পর কাজ করি বাচ্চাকে ঘুম পারিয়ে। দিনে দিনে অনেক অর্ডার আসে যেগুলা  আমাকে ক্যান্সেল করতে হয়।

রাজ টাইমস: উদ্যোক্তা জীবন সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?

ফারিহা আহমেদ: উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা ছিল বান্ধবীদের অনুপ্রেরণায়, আমার মায়ের সাপোর্ট আর আমার মনের জোর।

রাজ টাইমস: উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কতদিন ধরে এবং রেভিনিউ কেমন?

ফারিহা আহমেদ: আমার কাজের ৫ মাস। আলহামদুলিল্লাহ এই ৫ মাসে প্রায়  ৬৫,০০০ টাকার কেক সেল হয়েছে।

রাজ টাইমস: নতুন উদ্যোক্তারা এই ধরণের ব্যবসায় আসতে চাইলে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ফারিহা আহমেদ: আমার একটাই পরমর্শ থাকবে নতুন উদ্যোক্তা জন্য যে,তোমাদের কাছে যতটুকু আছে, যা পারো তাই নিয়ে মাঠে নামো। বসে থেকোনা।নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত কর।

রাজ টাইমস: বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনা কী?

ফারিহা আহমেদ: আসলে আমাদের দেশের বাইরে সেটেল হওয়ার পরিকল্পনা। আর ইউরোপে কেকের চাহিদা অনেক বেশি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে কিছু করার পরিকল্পনা আছে। 



  • এসএইচ


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top