যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না অনেকেরই
সৌদি প্রবাসীদের কফিলই শেষ ভরসা
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫০; আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫৬
-2020-10-02-02-49-14.jpg)
দেশে সংকটময় মুহূর্ত কাটাচ্ছেন সৌদি প্রবাসীরা। কাজের টানে সৌদি ফেরতে আগ্রহী কিন্তু কার ও নেই টোকেন কার ও নেই টিকেট। অন্যদিকে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করাতে পারে নি। অবার, অনেকের ইকামার মেয়াদ ও শেষ।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের তরফে তারা বারবার যোগাযোগ করেছে। কিন্তু ফলাফল শূণ্য। অগ্যতা নিরুপায় হয়ে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বাড়াতে প্রবাসীরা নিজ উদ্যোগে কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেউ আবার নিচ্ছেন দালালের সহায়তা।
আটকে পড়া প্রবাসীরা হন্য হয়ে ছুটছে ভিসা নবায়নের কাজে। গত মার্চ মাসে যারা ভিসা নিয়ে করোনার কারণে যেতে পারেননি তাদেরও নতুন করে ভিসা নিতে হবে।
দেশে আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। সময়মতো টিকিট না পাওয়ায় ভোগান্তি কাটছে না সৌদি প্রবাসীদের। নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও সংশ্লিষ্টরা ভিসা নবায়নের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাচ্ছেন না।
নিত্যদিনের মত বৃহস্পতিবারও (০১অক্টোবর) প্রবাসীদের জটলা ছিল মতিঝিলে বিমান ও সোনারগাঁও হোটেলে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে।
বৃহস্পতিবার টিকেট মেলে ৪০০ প্রবাসীর। সকাল থেকে কয়েক হাজার কর্মী সেখানে জড়ো হন। যাদের ভিসার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তাদের অনেকেও আসেন সেখানে। ভিসা ও আকামার মেয়াদ না থাকায় তাদের কোনো টিকিট দেয়া হচ্ছে না।
দুইটি সিরিয়াল ভাগ করে প্রবাসীদের টিকেট দেয়া হয়। ‘এ’ সিরিয়ালের ২০০ এবং ‘বি’ সিরিয়ালের ২০০ টিকিট। টিকিটের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে নতুন টোকেন দেয়ার কথা রয়েছে সৌদি এয়ারলাইন্সের। মতিঝিলের বিমান অফিসে সকালে ১০টা থেকে টিকিট দেয়া শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেয়া টিকিটগুলি ৫ অক্টোবরের ঢাকা-জেদ্দা, ঢাকা-দাম্মামের টিকিট। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে তারাই ভিড় করছেন বিমান অফিসের সামনে। দেয়া হয়।
বিভিন্ন দূতাবাস আর মন্ত্রণালয়ে ধর্ণা দিয়ে হতাশ প্রবাসীরা। কারণ কফিল না চাইলে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব নয়। এ নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। তবে মেয়াদ বাড়াতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে না- এমনটা ধরে নিয়ে অনেকেই নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তবে এই কাজটিতেও সবাই সফল হচ্ছে না। বিশেষ করে যারা বড় কোম্পানিতে কাজ করেন তাদের সঙ্গে কফিলের সরাসরি কোনো যোগাযোগই নেই।
বাধ্য হয়ে দালালের শরণাপন্ন হচ্ছেন অনেকেই। প্রয়োজনীয় কাগজ এনে দেয়ার বিনিময়ে অনেকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করছেন তারা। টাকা দেয়ার পরও তা পাবেন কিনা সেই ভরসাও করতে পারছেন না কেউ।
মহামারী প্রকোপে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
তেমনই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি প্রবাসী মামুন হোসেন। তিনি বলেন, আমি মক্কায় একটা হোটেলে কাজ করি। করোনার কারণে হোটেলটি এখনও বন্ধ।
মামুন হোসেনও তার কফিলের সাথে যোগাযোগে সক্ষম হন নি। সে জানায়, ওমরাহ শুরু হওয়ার পর সেটা খুলবে বলে জানতে পেরেছি। হোটেল বন্ধ থাকায় কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। কয়েকবার ফোন করেছি কিন্তু ধরেনি। তিনি বলেন, হোটেল খুললে হয়তো কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। এরপর যদি সে চায় তাহলেই কর্মস্থলে ফিরতে পারব। না হলে সম্ভব নয়।
তবে যেসব প্রবাসী ছোট বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাদের অনেকেই কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। কেউ কেউ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বন্ধ সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পর অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কাজে ফেরা শুরু হয়। সৌদি এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানও তাদের ফ্লাইট চালু করেছে। দুই এয়ারলাইন্স মিলে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের মতো সৌদি প্রবাসী সেদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
যাদের কাগজপত্র সময়মত ঠিকঠাক ছিল তারা চালু করা ফ্লাইটে নিজ কর্মস্থলে পৌঁছতে পারে। বাকিদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ আছে তারা যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট শুরুর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সৌদি আরবে গেছেন ৯১০ জন। ২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান।
প্রবাসীদের সময়মত পৌঁছে দিতে ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট চালুর পর সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে গেছেন ২৪০৮ জন প্রবাসী। ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ারলাইন্সটি।
প্রবাসীদের কর্মস্থলে ফেরাতে সরকার ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে এখন থেকে সপ্তাহে ২০টি করে ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ১০টি এবং বিমান বাংলাদেশের ১০টি। খবর-যুগান্তর
- এসএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: