ডিপ্লোমা কোটা বাতিলের দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রুয়েট প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪২; আপডেট: ৪ জুলাই ২০২৫ ২৩:৪৮

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দের অংশগ্রহণে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টায় রুয়েট সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশে রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরে মিছিল নিয়ে রুয়েট মেইন গেট হয়ে তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নেন তারা।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জোরালো কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন, "কোটা না মেধা? মেধা, মেধা”, “প্রকৌশল ক্ষেত্রে অবিচার, এবার চাই ন্যায়বিচার”, “প্রকৌশলীর সকল পদ, প্রকৌশলীদের অধিকার”।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকৌশল পেশায় মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। “একবার তো দিলাম প্রাণ, আবার কেন কোটা চান?”—এই স্লোগানটি এখন রুয়েট শিক্ষার্থীদের হৃদয় থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের প্রতীক।
এসময় যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজিমুল ইসলাম জানান,"আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি। ১০ম শ্রেণির পোস্টের নামই হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার, সেখানে আমি বিসিএস ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কেনো এপ্রোচ করতে পারবো না? যদি বিএসসি থাকলে এপ্লাই না করা যায় তাহলে ডিপ্লোমা কিভাবে এপ্লাই করতে পারে? আইন যদি হয় তাহলে তো সেটাই সবার জন্যই সমান হওয়া দরকার।"
রুয়েট প্রশাসন বরাবরই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এইচ এম রাসেল এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক হাসিবুল হাসান হিমেল। উল্লেখ্য, রুয়েটের সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ম গ্রেড বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয় ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা আন্দোলনের দাবি-সমূহের একটির প্রথম বাস্তবায়ন।
আজকের আন্দোলনের পটভূমিতে অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম সরকার বলেন,"জুলাই আন্দোলন হয়েছিল কোন ধরনের কোটা বৈষম্য থাকবে না কিন্তু আজকে আমরা দেখছি প্রকৌশল ক্ষেত্রের বেশ কিছু ক্ষেত্রে এখনো কোটা নামক অবিচার রেখে দেয়া হয়েছে। এ অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় বসার দরকার ছিল না, কিন্তু এই কোটা রেখে দিয়ে আমাদের ছাত্রদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করা হয়েছে। এটা শুধু আমাদের ছাত্রদেরই আন্দোলন না এটা সমস্ত প্রকৌশলীদের আন্দোলন।
এই কোটা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রকৌশলী গণ মাঠে থাকবেই। নিচের পদে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না কিন্তু ১০ গ্রেডে আপনারা ঢুকে ৯ম গ্রেড এসে আপনারা ৯ম গ্রেড ব্লক করছেন। প্রকৌশল পেশাকে ধ্বংস করার জন্য এটা একটা চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র অবশ্যই বিতাড়িত হবেই।" এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলের প্রতি অনুরোধ জানান, ছাত্রদের ও প্রকৌশলীদের দাবী পূরণ করে যেন প্রকৌশল পেশার মর্যাদা রক্ষা করা হয়।
অধ্যাপক রাসেল বলেন,“১০ম গ্রেড আমাদের অধিকার, প্রকৌশলীদের অধিকার, এটা আমাদের অনুরোধ নয়। ১০ম গ্রেড কে অবশ্যই দখল মুক্ত করতে হবে, মেধার মূল্যায়ন দিয়ে আমরা চাকরিতে রিক্রুট করতে চাই, আমরা বৈষম্যের শিকার থাকতে চাই না। মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হলে দেশ আরও দক্ষ প্রকৌশলী পাবে। শিক্ষার্থীদের এ দাবি জাতির উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।”
আয়োজকদের একজন, পুরকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব হোসাইন বলেন,"আমাদের আন্দোলন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। বরং প্রকৌশল পেশাকে মর্যাদা ও মেধার ভিত্তিতে গড়ে তুলতেই আমরা যৌক্তিক প্রতিবাদ করছি। আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান রাখবো।"
বিক্ষোভের সমাবেশের তিনটি দাবি হলো:
'ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হতে হবে, কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামেও সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেয়া যাবে না।', 'টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে অর্থাৎ ডিপ্লোমা ও বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে’,‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করতে পারবেনা, এই মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।’
এছাড়াও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহরান আল বান্না ইউশা বলেন,"প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিনের অবিচার ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে এখনই প্রয়োজন একটি জাতীয় স্তরের সংস্কার। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে এবং সারাদেশে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: