ছেলের ফাঁসির খবর জানেন না মহিউদ্দিনের শতবর্ষী মা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৩ ২১:১২; আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামি অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং কেয়ারটেকার মো: জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড আজ (বৃহস্পতিবার) রাতেই কার্যকর করা হবে।

তবে শেষ মুহূর্তেও ছেলের ফাঁসির খবর জানেন না তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম।

অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ড. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরে গ্রামের মানুষও বিচলিত।

স্বজনদের সাথে শেষ সাক্ষাতে নিজেকে ন্যায়বিচারবঞ্চিত দাবি করেছেন তিনি। একই সাথে স্ত্রীকে দেশের সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন বলেও জানিয়েছে ড. মহিউদ্দিনের স্বজনরা।

জান্দি গ্রামে ড. মহিউদ্দিনের পৈত্রিক বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়া তার চাচাত ভাইয়েরা বসবাস করে। তার শতবর্ষী মা কানে একদমই শুনেন না। তিনি এখনো জানেনই না যে তার ছেলের ফাঁসি হচ্ছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু জানায়নি।

গত ১৭ বছর তার সাথে দেখা নেই ছেলের। এমনকি তার ছেলে যে একটি হত্যা মামলার আসামি তাও জানেন না তিনি।

মহিউদ্দিনের চাচাত ভাই ছিকু মিয়া বলেন, ‘ড. মহিউদ্দিন ছিলেন আমার বাবার সমতুল্য। প্রায়ই আমি তার বাজার করে দিতাম।’

শেষ কথা কী হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া বলেন, ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন যে ওই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি ন্যায় বিচার পেলেন না এবং ‘আল্লাহর কাছে এর বিচার দিয়ে গেলাম’ বলে তাদের বলেছেন।

আর তার স্ত্রীকে বলেছেন, ‘যেহেতু এদেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, তাই জায়গা-জমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।’

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, ‘আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেলেও আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল। বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন, এই আশঙ্কায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

আরজু আরো বলেন, ‘আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন বিধায় মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেননি। বড় ভাই ভেবেছিলেন, অন্যায় করিনি, ইনশাআল্লাহ খালাশ পাব। রোষানলে পড়ে আমার ভাইয়ের ফাঁসি হবে।’

তিনি বলেন, ‘’কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিল। আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি তাতে লেখা রয়েছে, ‘২৭ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দেব, আপনারা শুধু অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে দিয়েন।’’

স্বজনরা জানায়, বাড়ির মসজিদে জুমার নামাজের আগে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওই গ্রামের প্রায় ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, ‘মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া। তার মতো একজন ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নেই।’

গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তার মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।’

ব্যক্তি জীবনে ইয়াফি ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ড. মহিউদ্দিন। তার বাবা মরহুম আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন।জানা গেছে, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top