ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ভ্যাকসিন দেওয়ার তাগিদ ভাইরোলজিস্টদের

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৩; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ১২:০৪

ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগী। দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতাল এখন ডেঙ্গু রোগীতে ভরা। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা।

তারা বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বে দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন রয়েছে, যেগুলো ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের ওপরে। ভ্যাকসিনপ্রাপ্তদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছে সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস।

গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ তাগিদ দেওয়া হয়। সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস-এর নেতাসহ দেশের সব ভাইরোলজিস্টস। এতে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্টস বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। তিনি ডেঙ্গু রোগের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, জনসচেতনতা ও মশক নিধনের পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিনও প্রয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।

ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে, যেগুলো এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রয়োগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর হার বৃদ্ধি ও রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে অতীতের তুলনায় ঘন ঘন নতুন ডেঙ্গু সেরোটাইপের পুনরাবির্ভাব হওয়া। এ কারণে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া বর্তমানে সিজনাল ফ্লু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। কাজেই জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হচ্ছে, যে কোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্টস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঐদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে করোনার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতে যে কোনো ভাইরাসঘটিত মহামারি মোকাবিলা করতে একটি ‘জাতীয় ভাইরোলজিস্ট ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

সোসাইটি ফর মেডিক্যাল ভাইরোলজিস্টস বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ায় আলোচনা এবং কিছু আকস্মিক মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন।

আলোচনাসভায় চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ-ছয় দিন থাকে। তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেকে মনে করেন, রোগ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিন ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’।

এ সময় সবার সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা যথেষ্ট। তিনি বলেন, আমাদের ডেঙ্গু নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ অ্যান্টিজেন এবং ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাই এই রোগটির বিস্তার রোধে একদিকে যেমন জনসচেতনতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে রোগের উপসর্গ বুঝে ঠিক সময়ে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা উচিত।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top